* বিরাজ করছে চরম বিশৃঙ্খলা সিনিয়রদের নির্দেশনা অমান্য করছেন কর্মকর্তারা
* বদলি করার পরেও অনেকে আদেশ না মেনে থাকছে আগের কর্মস্থলেই
* পদায়ন হলেও ঠেকানো হচ্ছে নতুন কর্মকর্তাদের যোগদান
* প্রশাসনে এখন একেবারেই কোনো চেইন অব কমান্ড নেই
জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেরামত করা হচ্ছে চেইন অব কমান্ড। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জনপ্রশাসনে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাই সিনিয়রদের নির্দেশনা অমান্য করে ইচ্ছামতো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অনেককে বদলি করা হলেও আদেশ না মেনে আগের কর্মস্থলে থাকতে চাচ্ছেন। এমনকি পদায়ন হলেও যোগদান ঠেকানো হচ্ছে। এভাবে দীর্ঘদিন ধরেইপ্রশাসনে বিশৃঙ্খলা চলছে। এমন পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনের শীর্ষস্থানে যারা বসে আছেন তাদের অদক্ষতা এবং অপেশাদার দলবাজিও একটা বড় কারণ। জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০২৪ সালে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কিছু আমলাপ্রশাসনে চর দখলের মতো চেয়ার দখলের প্রতিযোগিতায় নামে। আর স্থায়ী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছেদীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার। তারই ধারাবাহিকতায় প্রশাসনে এখন একেবারেই কোনো চেইন অব কমান্ড নেই। বরং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের সচিব নিয়োগে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ চলছেবিএনপি-জামায়াত সমর্থিত কর্মকর্তাদের মধ্যে। একজনকে ডিঙিয়ে আরেকজন চেয়ার দখল করতে মরিয়া। ইতিমধ্যে জনপ্রশাসনের এপিডি নিয়োগ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় পর্যন্তগড়িয়েছে। অথচ সচিবএ দায়িত্বনির্ধারণ করে। বর্তমানে এপিডি ছাড়াই সরাসরি শাখার যুগ্ম-সচিবরা সচিবের কাছে ফাইল পাঠাবে।
সূত্র জানায়, দুটি রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সরকারের এক প্রভাবশালী উপদেষ্টার অনুগত কর্মকর্তাকে এপিডি পদে বসাতে চলছে জোর তৎপরতা। ওই পরিপ্রেক্ষিতে সদ্য নিয়োগ পাওয়া খুলনার কমিশনারকে ওই পদে নিয়োগের জন্য আনা হলেও তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। মূলত মন্ত্রণালয়ের এপিডি থেকেই সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব ও উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতি ও প্রেষণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের জন্য ফাইল পাঠানো হয়। ওই পদের বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে। এখন এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে নির্দেশনা এলে দায়িত্ব দেয়া হবে। পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিশৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে। ভেঙে পড়া চেইন অব কমান্ড ফেরানোসহ রদবদলে শৃঙ্খলা আনতে কাজ করছেমন্ত্রণালয়।
সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে পদোন্নতি দিয়ে একজনঅতিরিক্ত সচিবকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়। বিসিএস ১৫তম ব্যাচের ওই কর্মকর্তা ই-মেইলে যোগদানপত্র দিলেও উপদেষ্টার আপত্তির কারণে সচিবের চেয়ারে বসতে পারেননি। মার্চ থেকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগেসচিব নেই। আগস্টে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব অবসরে গেলেও অদ্যাবধি ওই বিভাগে সচিব নেই। বর্তমানে সব মিলিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে সচিব নেই। ওসব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের রুটিন দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাপালন করছেন। কিন্তু নিয়মিত সচিব না থাকায় ওসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দাপ্তরিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। তবে ওসব পদ দ্রুতই পূরণ হবে বলে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারাজানিয়েছেন।
এদিকে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, একটি অতিরিক্ত সচিবের সমমানের পদে নিয়োগ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা পর্যন্ত গড়ানোর বিষয়টি শোভন নয়। সরকারের একটি পক্ষের ইচ্ছাতে সমপ্রতি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও অতিরিক্ত সচিবকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এপিডির জন্য আনা হয়। কিন্তু প্রভাবশালী একটি মহল তাকে এপিডিতে পদায়ন করতে দেয়নি। তাকে অন্য উইংয়ে দেয়া হয়েছে। ওই নিয়োগ না দেয়ার পেছনে একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে জানা যায়। তাছাড়া প্রশাসনে বিশৃঙ্খলতার কারণে অনেকের আদেশ হচ্ছে আবার বাতিল হচ্ছে। কোনো কমান্ড নেই। আবার বদলির আদেশ হলেও কর্মকর্তারা যোগ দিতে গিয়ে বাধা পাচ্ছেন। মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পছন্দ না হলে সচিবের যোগদানও আটকে যাচ্ছে। এসব নিয়ে প্রশাসনে নানামুখী আলোচনা চলছে।
অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন সিনিয়র সচিব হিসেবে মো. এহছানুল হক যোগ দিয়ে কর্মকর্তাদের নানান নির্দেশনা দিয়েছেন। জনপ্রশাসনে নতুন যোগ দিয়েই তিনি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও তদুর্ধ্ব জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে কর্মকর্তাদের কথা শুনে একগুচ্ছ নির্দেশনা দেন। সততা বজায় রেখে কাজ করা, আসন্ন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখাসহ রদবদলের ক্ষেত্রে সবসময় যোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে বলা হয়েছে। তারপরও কয়েক দফায় বিভিন্ন উইংয়ের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। তাতে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, প্রশাসন মেরামতের কাজ অনেকটাই শুরু হয়েছে। দ্রুতই রদবদলের ক্ষেত্রেও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
 
                           
                           
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
                            
                       
     
                            
                        জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ
- আপলোড সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০২:৩৭:১৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০২:৩৭:১৭ অপরাহ্ন
 
                                  
                     
                             
                            
                             কমেন্ট বক্স 
                            
 
                          
                       
                        
                                      সর্বশেষ সংবাদ
                                
                                 
  স্টাফ রিপোর্টার
 স্টাফ রিপোর্টার  
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                     
                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                